
Science vs Superstition in bengali | বিজ্ঞান ও কুসংস্কার পার্ট ৩
আমরা গত দুটি প্রবন্ধে বিজ্ঞান ও কুসংস্কার নিয়ে অনেকটাই আলোচনা করেছি (পার্ট ২ পড়ুন)। আপনারা চাইলে সেগুলি দেখে আসতে পারেন। আজকের এই প্রবন্ধটিতে আমরা আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যেগুলি গত দুটি প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়নি। আশা করছি আপনাদের ঠিক আগের মতনই এই প্রবন্ধটিও ভালো লাগবে।
● শিশুদের স্নানের জল রোদে দিলে দুর্বা দিতে হয় কেন?
বড় পাত্রে করে রোদে রাখা শিশুদের স্নানের জলে কয়েকটি দুর্বা বা তুলসীপাতা ভাসতে দেখা যায়। প্রশ্ন করলে গৃহিণীরা জবাব দেন, যাতে কারো নজর না লাগে তাই দেওয়া হয়েছে। নজর লাগার পেছনে কোন বাস্তব যুক্তি নেই। কিন্তু জলে দুর্বা দেওয়ার পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের যুক্তি। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি সরাসরি এসে জলে পড়ে মিশে যায়। ফলে এই রশ্মি মিশ্রিত জলে নিয়মিত শিশুকে স্নান করালে ত্বকের উপর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একমাত্র সবুজ দুর্বাঘাসই এই রশ্মিকে শোষণ করতে সক্ষম। জলটি এই সূর্য রশ্মি থেকে মুক্ত থাকে এবং শিশুর স্নানের উপযোগী হয়।
● ফল খেয়ে জল খাওয়া উচিত নয় কেন?
ফলে থাকে বিভিন্ন ধরণের অ্যাসিড। ফল খেয়ে জল খেলে অ্যাসিড, অন্ত্রের অ্যাসিড এবং জল, এই তিনের মিশ্রণে অর্জীর্ণ, অম্বল প্রভৃতি রোগ হতে পারে। এটি কোন কুসংস্কার নয়। সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত।
● খাবার সময় কথা বলা উচিত নয় কেন?
প্রথমত, খাবার সময় কথা বললে খাদ্যবস্তু ঠিকমতো চিবানো হয় না। ফলে পেটের রোগ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, খাবার সময় কথা বললে অসাবধানতা বশতঃ খাদ্যকণা শ্বাসনালীতে ঢুকে গিয়ে হাঁচি, কাশি এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। কাজেই সংস্কারটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
● খাবার পর থালায় জল ঢালা হয় কেন?
খাবার পর থালায় জল ঢালার প্রথা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। এর পেছনে যে বাস্তবসম্মত কারণটি বর্তমান, তা হল খাবার পর থালায় জল না ঢাললে থালাটায় খাবারের অবশিষ্টাংশ শুকিয়ে লেগে যায়। ফলে থালাটি মাজতে কষ্ট হয়।
● পৌষ, চৈত্র এবং ভাদ্র মাসে বাড়ি থেকে কাউকে তাড়াতে নেই কেন?
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সমাজে প্রচলন আছে যে পৌষমাস, চৈত্রমাস কিংবা ভাদ্রমাসে কোন মানুষকে এমনকি কুকুর বিড়ালকেও বাড়ী থেকে তাড়াতে নেই। এর পেছনে যে বাস্তবসম্মত কারণটি বর্তমান, তা হল এই তিনটি মাস চরম মাস। পৌষ মাসে প্রচণ্ড শীত, চৈত্রমাসে প্রচণ্ড খরা এবং ভাদ্রমাসে প্রচণ্ড বর্ষা। ফলে এ সময় কাউকে তাড়ালে সে ভীষণ অসুবিধার মধ্যে পড়বে। যা মানবিকতার দিক থেকে অনুচিত কাজ। কাজেই সংস্কারটি যুক্তিসঙ্গত।
● হিন্দু মৃতদেহ দাহ এবং মুসলিম মৃতদেহ কবর দেওয়া হয় কেন?
হিন্দু শাস্ত্রমতে মৃতদেহ দাহ এবং মুসলিম শাস্ত্র মতে মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। এর পেছনে যে বিজ্ঞানসম্মতো কারণটি বর্তমান তাহল, সুস্থ শরীরে মৃত্যু খুব কম সংখ্যক। বেশীরভাগ মানুষই নানারকম রোগে ভুগে মরে। কাজেই সেই মৃতদেহে বিভিন্ন রোগের জীবাণু সজীব অবস্থায় থাকে। একমাত্র মাটি এবং আগুন সেই জীবানু গুলি নষ্ট করতে সক্ষম। সেই জীবাণুর দ্বারা যাতে সুস্থ লোকেরা আক্রান্ত না হয় সেই কারণে হিন্দুমতে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং মুসলমান মতে মাটির ত চাপা দেওয়া হয়। তাছাড়া ধর্মীয় ব্যাপার তো আছেই। কাজেই সংস্কারটি বিজ্ঞানসম্মত এর কোনটিই কু-সংস্কার নয়।
● একডাকে সাড়া দিতে নেই কেন?
বহুদিন ধরে আমাদের সমাজে একটি রীতি প্রচলিত আছে যে রাত্রে কেউ ডাকলে একডাকে সাড়াদিতে নেই, এমনকি ঘরের লোকও যদি বাইরে থেকে ডাকে তাহলেও একথা মেনে চলা উচিত। সংস্কারটি কিছুটা যুক্তিযুক্ত। কারণ, মানুষ ঘুমোবার পর তার শরীর অচেতন অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় একবারের ডাক তার কানে পৌঁছালেও অনেক সময় সঠিকভাবে সেটা ঠিক করে বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না কে ডাকছে। কাজেই এ সুযোগটা দুষ্টলোকেরা নিতে পারে। ফলে জীবনের বা সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে। কাজেই প্রথাটি মনোবিজ্ঞানের থেকে বাস্তবসম্মত।
● নারকেল গাছ কাটা উচিত নয় কেন?
নারকেল গাছ যথেষ্ট মূল্যবান। বহুবছর ধরে এ গাছ আমাদের ফল দেয়, অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের সাহায্য করে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বাজ পড়লে তা এই গাছের ওপর দিয়ে যায়। ফলে মানুষের জীবন রক্ষা হয়। কিন্তু যদি তুচ্ছ কারণে এ গাছ কেটে ফেলার সুযোগ সবাই পায় তাহলে মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।
● গেঞ্জী বা গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নেই কেন?
ব্যবহার গত কারণে গামছার ওপর চাপ বেশী পড়ে এবং যে সুতো দিয়ে গেঞ্জীর কাপড় তৈরী হয় তা সেলাই করলে টেকসই হয় না। ফলে এই জিনিস দুটো সেলাই করলে তা লাভজনক হয়না। এছাড়া সবাই সেলাই করে ব্যবহার করলে চাহিদা কমে যাবে ফলে তাঁতশিল্প মার খাবে। তাঁতীর ঘরে দারিদ্র্য নেমে আসবে। কাজেই সংস্কারটি মোটেই অযৌক্তিক নয়।
0 Comments: